নকশী কাঁথা:চাঁপাইনবগঞ্জ জেলার অন্যতম ঐতিহ্য।
সাধারণত: একাধিক পুরোনো শাড়ীর পরত দিয়ে কাঁথা তৈরী করা হয়। ফলে কাঁথা হয় মোলায়েম। কাঁথা লোকশিল্প হিসাবেও পরিগণিত। কাঁথায় যদি নকশাদার কাজ থাকে তবে তাকে নকশী কাঁথা বলে। সাধারণত বিশেষ উপলক্ষে ব্যবহৃত এই কাঁথাগুলোর নকশা নৈপূণ্যের সাথে কূশলী হাতে করা হয় এবং পুরূষানুক্রমিকভাবে এই কাঁথা সংরক্ষণ করা হয়। জসীমউদ্দীনের কাব্যগ্রন্থ নকশি কাঁথার মাঠ (প্রথম প্রকাশ ১৯২৯) থেকে বাংলাদেশে এই নামকরণ জনপ্রিয় হয়েছে।
বাহারি নাম এবং মায়া-মমতার ভরা নকশী কাঁথা: আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ নকশী কাঁথা ব্যবহার করে আসছে৷ শহরে কিংবা গ্রামে সর্বত্র আজও কাঁথার যথেষ্ট কদর রয়েছে৷ তবে আগেকার দিনে প্রতিটি পরিবারে নকশী কাঁথার ব্যবহার ছিল ব্যাপক ও বহুবিধ৷ ব্যবহার অনুযায়ী এগুলোর নামেও ছিল ভিন্নতা৷ যেমন, শীতের জন্য লেপকাঁথা, বালিশে ব্যবহারের জন্য বয়তন, নামাজের জন্য জায়নামাজ কাঁথা, বসার জন্য আসন কাঁথা এবং খাবারের জন্য দস্তরখানসহ কাঁথার ব্যবহার অনুযায়ী আরো অনেক নাম ছিল৷ মেয়েদের বিয়েতে এবং আত্মীয়-স্বজনকে কাঁথা উপহার হিসেবে দেয়ারও প্রচলন ছিল৷ স্নেহময়ী মা তার সন্তান, প্রেমময়ী স্ত্রী তার স্বামীর জন্য এবং নানি-দাদি, খালা-ফুফুরা পৃথিবীতে নতুন অতিথির আগমনকে সামনে রেখেও কাঁথা তৈরি করতো৷ এ প্রচলন আজও একেবারে ফুরিয়ে যায়নি৷
পরিবর্তিত চাহিদা ও নকশী কাঁথা: সেকালের নকশী কাঁথা আজো আছে এবং তৈরিও হচ্ছে৷ তবে বিবর্তনের ধারায় সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্মেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া৷ নকশী কাঁথার চাহিদা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এসেছে ব্যাপকতা ও নতুনত্ব৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় তৈরি নকশী কাঁথা দেশের সীমা পেরিয়ে আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাদৃত হচ্ছে৷ শৌখিন পণ্য হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে নকশী কাঁথা৷ পুরাতন কাপড় ও সুতোর পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে নতুন মার্কিন, লাল শালু কিংবা কালো কাপড় এবং বিদেশি সিল্কি পেটি সুতো৷
নকশী কাঁথার প্রদর্শনী: চাঁপাইনবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় ডাইসিন গ্রুপের সহযোগীতায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় নকশী কাঁথার প্রদর্শনী।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস