Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি:

ক. নাট্যচর্চা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাট্যচর্চা সংস্কৃতির অপরাপর ধারাগুলোর মত উৎকর্ষ লাভ করেনি। যতদূর জানা যায়, নবাবগঞ্জে সর্বপ্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে মহারাজপুর গ্রামে। তারপর থেকে এখানে নাটক মঞ্চায়ন জনপ্রিয়তাব্যাপকতা লাভ করে। ১৮৯১ সালে নবাবগঞ্জে এক্সপ্রেস থিয়েটার নামে প্রথমবারের মত একটি নাট্যশালা গড়েঠে। এটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় জমিদার ললিত মোহন মিত্র, গোপীমোহন সাহা, উমেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, শরৎ চ্যাটার্জিপঞ্চানন সিংহ। ঐ সময়ের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা সৌরেশচন্দ্র মৌলিকের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় সৌরেশ নাট্যশালা। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় বহু হিন্দু ভারতে পাড়ি জমালে এখানকার নাট্যচর্চায় কিছুটা ভাটা পড়ে। অবশ্য কয়েক বছর পরেই জনৈক এহসান আলী খানের উদ্যোগে উদয়ন নাট্য সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংসদের কর্মকান্ডের ফলে নবাবগঞ্জের নাট্যচর্চায় গতি সঞ্চারিত হয়। ১৯৫২ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আল মামুন সানাউল হকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটি স্থায়ী নাট্যমঞ্চ হিসেবে ‘টাউন হল’ স্থাপিত হয়। স্বাধীনতা লাভের পূর্বে আরো কিছু নাট্য সংগঠন গড়েঠে। তন্মধ্যে ‘প্রগতি’‘আর্ট কাউন্সিলে’র নাম উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত ‘সুপ্রভা’‘থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী’ অদ্যাবধি নাট্যচর্চায় ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্প্রতিককালে জনতা নাট্যগোষ্ঠী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এবং সরকারিভাবে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে অনিয়মিতভাবে নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে।

খ. সংগীত
বিশ শতকের প্রথমার্ধেচাঁপাইনবাবগঞ্জে সংগীতচর্চার কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। কিন্তু ঘরে ঘরে সংগীতের চর্চা ঠিকই হত। সন্ধ্যার পর পথ বেয়ে চললে হারমোনিয়ামবাঁয়া-তবলার শব্দ শোনা যেত বিভিন্ন ঘর থেকে। নববর্ষের ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানে দোকানে দোকানে জমে উঠত গানের আসর। ১৯৬০ সালের পরচাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাতিষ্ঠানিক সংগীতচর্চা শুরু হয়। তখন দুটি প্রতিষ্ঠান সংগীতচর্চার মাধ্যম হিসেবে গড়েঠে। প্রতিষ্ঠান দুটো হচ্ছে ‘বাণী বিতান’‘সংগীত বিদ্যালয়’। শেখ লাল মোহাম্মদ বাণী বিতানবাবু ক্ষীরোদ লাল রায় সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং শিক্ষক হিসেবে নবাবগঞ্জে সংগীতচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭১-এ স্বাধীনতা লাভের পর দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে নবতর স্পন্দন শুরু হয় সে সময় নবাবগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেতার প্রভাব পড়ে। ১৯৭২ সালে ‘সংগীতা সংগীত নিকেতন’ প্রতিষ্ঠিত হয়ার মাধ্যমে নবাবগঞ্জে স্বাধীনতা-উত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংগীতচর্চা শুরু হয়। বর্তমানেএ প্রতিষ্ঠানটি তার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সংগীতা সংগীত নিকেতনের পরবর্তী সময়ে নবাবগঞ্জে অসংখ্য সংগীত বিদ্যালয় গড়েঠে এবং জেলার সংগীতচর্চায় ভূমিকা পালন করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘উত্তরায়ন সাংস্কৃতিক পরিষদ’ (১৯৭৬), ‘সুরতরঙ্গ বিদ্যালয়’ (১৯৮৩), ‘মুক্তমহাদল’ (১৯৭৫), ‘সংলাপ’ (১৯৯০), ‘মহানন্দা সংগীত নিকেতন’ (১৯৮৮), ‘উদীচী’ (১৯৮৪), ‘থিয়েটার’ (১৯৭৮), ‘সুরছন্দ’, ‘স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠী’‘সারগাম’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াবর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীশিশু একাডেমী শিশু-কিশোরদের সংগীতনৃত্য প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।

গ. চিত্রকলা
চিত্রশিল্পে নবাবগঞ্জ পিছিয়ে থাকলেএ জেলার কৃতী সন্তান রফিকুন্নবী (রনবী নামে পরিচিত) শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেখ্যাতিসম্মান লাভ করেছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী ‘টোকাই’র স্রষ্টা রনবী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর ‘টোকাই’ আজ দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িতঅবহেলিত মানুষের পক্ষ থেকে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া নবাবগঞ্জের চিত্রশিল্পী খাইরুল আলম, শফিকুল আলম, হাবিবুর রহমান, তসিকুল ইসলাম বকুল, রাজা খান, এস. কে সাহা পিয়াস প্রমুখ শিল্পী হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছেন।

ঘ. লোকসংগীত
গম্ভীরাঃ
গম্ভীরাচাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। নানা-নাতির কথোপকথন এবং সংগীতের মাধ্যমে সমাজের বিবিধ অসঙ্গতির সমালোচনা করা এ গানের বৈশিষ্ট্য। নানা-নাতি ছাড়াবেশ কয়েকজন দোহার থাকেন। তারা হারমোনিয়াম, তবলা, জুড়ি ইত্যাদি বাজিয়ে থাকেন।

আলকাপঃ আলকাপ এক ধরনের হাস্যরসাত্মক লোকসঙ্গীত। বোনাকানা নামে জনৈক ব্যক্তি এ গানের উদ্ভাবন করেন। আলকাপ ছয়টি পর্বে বিভক্ত হয়ে পরিবেশিত হয়ে থাকে। পর্বগুলো হচ্ছে- জয়ধ্বনি, আসর বন্দনা, খ্যামটা, ফার্স, বন্দনা ছড়াপালা। আলকাপে নারী চরিত্রে সাধারণত ছেলেরা রূপদান করে থাকে। তাদের ছোকরা বলা হয়ে থাকে। সারা রাত ধরে আলকাপ অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে আলকাপের চর্চা অনেকটা কমে গেছে।

মেয়েলি গীতঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়েলি গীতগুলো স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে বিয়ে বাড়িতে গীত পরিবেশন এ এলাকায় একটি অপরিহার্য বিষয়। পানচিনি, আইলপোন, মেহেন্দিপাত, গায়ে হলুদ, থুবড়া খায়া, স্নান, বরানুগমন, বৌ-বিদায় প্রভৃতি অনুষ্ঠানে মেয়েলি গীত পরিবেশিত হয়ে থাকে। বিয়ের আনন্দের পাশাপাশি নারী জীবনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ-বেদনার কথা উপস্থাপিত হয়ে থাকে মেয়েলি গীতে।