সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
তাহখানা পারসিয়ান শব্দ যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তাহখানা নামে পরিচিত। ভবনটির উত্তর-পশ্চিমে আরও দুটি কাঠামো রয়েছে নিকটস্থটি একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ এবং একটু উত্তরে অবস্থিত অপরটি ভল্টেড বারান্দা ঘেরা একটি গম্বুজ সমাধি। যেহেতু ভবনগুলো একই সময় একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল, সেহেতু সবগুলো ভবনকে একত্রে একটি একক ইউনিট বা একটি কমপ্লেক্স হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে বর্তমানে এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত। কে এই কমপ্লেক্সের নির্মাতা তা নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। তবে ভবনগুলোর স্থাপত্যরীতির বৈশিষ্ট্য, সুলতানি রীতির সৌধসমূহের মাঝে বিষম বৈশিষ্ট্যের মুঘলরীতির প্রয়োগ এবং সমসাময়িক ও পরবর্তী ঐতিহাসিক বিবরণ ইঙ্গিত করে যে এর নির্মাতা মুগল সুবাহদার শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ) । তিনি সুফী সাধক শাহ নেয়ামতউল্লাহ ওয়ালীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ মাঝে মাঝে গৌড়-লখনৌতি যেতেন এবং তিনি সেখানে অবস্থানও করতেন। রাজমহলেই ছিল শাহ সুজার রাজধানী, যা গৌড় থেকে খুব দূরে নয়। তবে প্রায়ই গৌড়ে তার ভ্রমণ এবং সেখানে অবস্থিত লুকোচুরি দরওয়াজা নামে জাকজমকপূর্ণ মোঘল তোরণ এ যুক্তিটিকে আরও বেশি অকাট্য করে তুলেছে। খুব সম্ভবত শাহ সুজা দরবেশের খানকাহ হিসেবে এই ছোট্ট প্রাসাদটি এবং এর সংলগ্ন মসজিদ ও সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেন। সমাধিটি সম্ভবত দরবেশের (মৃত্যু ১৬৬৪ অথবা ১৬৬৯ খ্রিঃ) অন্তিম শয়নের জন্য পূর্বেই নির্মিত হয়েছিল।
দ্বিতল ভবনটি মূলত ইট নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বীম ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিম দিক থেকে ভবনটিকে দেখলে একতলা মনে হয়, পূর্বদিক থেকে অবশ্য দ্বিতল অবয়বই প্রকাশ পায়, যার নিচতলার কক্ষগুলি পূর্বদিকে বর্ধিত এবং খিলানপথগুলি উত্থিত হয়েছে সরাসরি জলাশয়টি থেকে। ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে একটি গোসলখানা যেখানে পানি সরবরাহ হতো একটি অষ্টভুজাকৃতির চৌবাচ্চার মাধ্যমে জলাশয় থেকে। উত্তর পার্শ্বে একটি ছোট পারিবারিক মসজিদ অবস্থিত এর পেছনে রয়েছে একটি উন্মুক্ত কক্ষ যেটি একটি অষ্টভুজাকার টাওয়ার কক্ষের সাথে সংযুক্ত ছিল। এ টাওয়ার কক্ষটি সম্ভবত ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হতো। অষ্টভুজাকার টাওয়ারটি সমস্ত কমপ্লেক্সটিতে ভারসাম্য প্রদান করেছে। প্রাসাদটি প্লাস্টার করা এবং তা খোদাইকৃত। এসব অলংকরণ রীতি মোঘল আমলের। তাহখানা কমপ্লেক্সটি সুলতানি যুগের নগরে মুগল রীতির স্থাপত্য নিদর্শনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের স্থাপত্য বাংলায় প্রথম। এ ধরনের কমপ্লেক্সের সূত্রপাত হওয়ার পর ঢাকা ও মুর্শিদাবাদে এরূপ প্রাসাদ, মসজিদ অথবা সমাধিসৌধ সম্বলিত কমপ্লেক্স একটি প্রচলিত রীতিতে পরিণত হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS